ইতিহাসের সবচেয়ে চরম হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে জুলাই বিপ্লব ও অভ্যুত্থান সংগঠিত হয়। জুলাই অভ্যুত্থান বাংলাদেশের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা, যেখানে ছাত্রসমাজ এবং সাধারণ জনগণ একসঙ্গে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, বাক-স্বাধীনতার জন্য আন্দোলনে যোগ দেয়। ২০২৪ সালের ২৭ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে এই অভ্যুত্থান শুরু হয়, যা দ্রুত সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীরা সুষ্ঠু নির্বাচন, বাকস্বাধীনতা, এবং মানবাধিকারের সুরক্ষার দাবিতে রাস্তায় নামে। সরকারের কঠোর দমননীতি, লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস এবং গ্রেফতারের পরও আন্দোলনকারীরা পিছু হটেনি। ৩১ জুলাই, ছাত্র-জনতার ঐক্যের চাপে জাতীয় আন্দোলন চরম আকার ধারণ করে। অভ্যুত্থানের ফলে ৩৬ জুলাই সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। এই অভ্যুত্থান ছিল ছাত্র-জনতার ত্যাগ, সাহসিকতা, এবং গণতন্ত্রের প্রতি অঙ্গীকারের এক উজ্জ্বল উদাহরণ। এটি দেশজুড়ে ঐক্যের বার্তা ছড়িয়ে দেয় এবং তরুণ প্রজন্মকে রাজনীতিতে নেতৃত্বের জন্য প্রস্তুত করে। অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জাতি নতুন এক রাজনৈতিক চেতনার পথপ্রদর্শক পায়। জুলাই অভ্যুত্থান বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পথে এক স্থায়ী অনুপ্রেরণা।
দলমত নির্বিশেষে সকলেই বলছেন যে, শুধুমাত্র মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস ছাড়া ব্রিটিশ এবং পাকিস্তান আমলসহ বিগত ১০০ বছরে এত কম সময়ে এত বিপুল মৃত্যু ঘটেনি। সরকার থেকে বলা হচ্ছে যে, ছাত্রদের সব দাবি তো পূরণ করা হয়েছে। তারপরেও কেন আন্দোলন? যখন এই প্রশ্ন সরকারি মহল থেকে উত্থাপন করা হয় তখন এই বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হয় না যে, সংলাপের আহবান জানানোর আগেই ২৬৬টি প্রাণ ঝরে গেছে। এরপরে কি আর আন্দোলন ছাত্রদের দাবি দাওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে? সে আন্দোলন স্বয়ংক্রিয়ভাবেই রাজনৈতিক আন্দোলনে রূপান্তরিত হয়। এখন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সমাজের সব শ্রেণীর, সব পেশার, সব বয়সের, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সব লিঙ্গের সমাবেশ ঘটেছে। ছাত্রদের আন্দোলন এখন ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে রূপান্তরিত হয়েছে।
১৯৬৯ সালে আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান দেখেছেন। তারা ১৯৯০ সালে এরশাদের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান দেখেছেন। কিন্তু ২০২৪ সালের এই ব্যাপক গণঅভ্যুত্থান আগের সবগুলি অভ্যুত্থানকে ছাড়িয়ে গেছে। কেন এই সর্বগ্রাসী গণঅভ্যুত্থান? বিগত ১৫ বছরের শাসনকে জনগণ মেনে নেয়নি।বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, অপহরণ, গুম, খুন, লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার, লক্ষ কোটি টাকার দুর্নীতি, তিন তিনটি নির্বাচনে নির্বাচনের নামে তামাশা, বিরোধী দলের কণ্ঠরোধ, দ্রব্যমূল্যের ৫ থেকে ৬ গুণ বৃদ্ধি ইত্যাদিকে মানুষ শাসন নয়, অপশাসন বলে বিবেচনা করছে।
বুদ্ধিজীবীরা বলছেন, ১৫ বছরের শাসন হলো রাজনৈতিকভাবে স্বৈরাচার এবং অর্থনৈতিকভাবে ক্লেপ্টোক্র্যাসি, অর্থাৎ চৌর্যবৃত্তি। ছাত্রদের এই আন্দোলনে লক্ষ লক্ষ মানুষের স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ঐ অপশাসনের বিরুদ্ধে মানুষের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। এই আন্দোলন অপশাসনের অবসান ঘটিয়ে খাঁটি গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করে একটি আদর্শ বাংলাদেশ বিনির্মাণের সংগ্রাম। এটি একটি ব্যাপক বিশাল গণঅভ্যুত্থান। এই অভ্যুত্থানের অগ্রনায়ক হলো এদেশের তরুণ।
অবশেষে সকলের জোর প্রতিবাদ, আন্দোলন, ত্যাগে ৫ আগষ্ট জুলাই বিপ্লব হতে বিজয়ে রূপ নেয়। আসুন এই বিজয়কে ধরে রাখার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করি। সকলে মিলে দেশটাকে সকলের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে অংশ নিই। তাহলে ছাত্র সমাজের আত্নত্যাগের এই বিপ্লব কাজে আসবে।